পড়ালেখা ও অনলাইনে অর্থ উপার্জন | ইন্টারনেটে সহজে অর্থ উপার্জনের সেরা কিছু পদ্ধতি
আপনি একজন ছাত্র। আচ্ছা আপনি কি সারাদিনই পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন? এই প্রশ্নটি যদি আমি আপনাকে করি তাহলে ৯৯% স্টুডেন্ট এ বলবে “না”। আর যদি সেটা হয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একজন শিক্ষার্থী নিজেকে নতুনভাবে আবিস্কার করে। চারপাশের নানান অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়৷ একরকম ম্যাচুরিটি আসে। সেই সাথে তৈরী হয় নিজের একটা বাড়তি খরচ।
বাবা-মার পাঠানো সেসব খরচে নিজের চলাটা অনেকের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আর যদি বাবা-মার আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়৷ আজ আমি কিছু টিপস দিবো আপনাদের যেগুলো আপনার জীবনকে বদলে দিতে পারে। নিজের কিছু উপার্জনের পথ তৈরী হতে পারে। তো চলুন শুরু করা যাক….
অনলাইনে আয়, হ্যাঁ আমরা কমবেশি সবাই জানি ও শুনে থাকি। কিন্তু এই জিনিসটা কেন জানি কারো সহজে বুঝে আসতে চায় না। আমরা সবসময় ভালো কাজের সুযোগ থাকা স্বত্তেও কেন জানি নিজেদেরকে কাজে লাগাই না। অনলাইনে আয় করতে কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন…
সেগুলো হলঃ সময়, পরিশ্রম, আগ্রহ, ধৈর্য্য, দক্ষতা।
শুরুতেই আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে – “আমার তো সময়ই নাই। আমি কিভাবে এসব কাজ করবো। পড়ালেখা করারই টাইম পাই না”। হুম কথা সত্য কিন্তু মাথায় রাখেন আপনি সারাদিন কি করেন? কলেজ/ভার্সিটি/টিউশনি/আড্ডা এসবের বাইরে আমাকে সময় বের করতে হবে৷
আর কাজ করার প্রতি আগ্রহ থাকতে হবে। সাথে থাকতে হবে ধৈর্য্য৷ অনেকবার হয়তো আপনি সফল হবেন না। তবে মন রাখবেন একবার না একবার আপনি সফল হবেনই। এরকম মন মানষিকতা নিয়ে কাজে নামতে হবে। বাংলাদেশে ইন্টারনেটে অর্থ উপার্জনের অনেক পদ্ধতি রয়েছে। অনেকেই দ্বিধায় পড়েন, কোনটি করবেন এবং কোনটি করবেন না এই নিয়ে।
ফ্রিল্যান্সিং একটি ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্র যাতে প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষ যুক্ত হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিং হল এমন একটি কাজ যা আপনি স্বাধীনভাবে করতে পারেন, কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে। আপনি আপনার নিজের সময় এবং পরিবেশে কাজ করতে পারেন, এবং আপনি আপনার নিজের নিয়ম এবং শর্তাবলী নির্ধারণ করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অনেকগুলি ক্ষেত্র রয়েছে। এখানে কয়েকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্র রয়েছে:
- গ্রাফিক্স ডিজাইন: গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিক্স তৈরি করেন, যেমন লোগো, ব্যানার,পোস্টার, ওয়েবসাইট ডিজাইন ইত্যাদি।
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট: ওয়েব ডেভেলপাররা ওয়েবসাইট তৈরি করেন এবং রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
- কন্টেন্ট রাইটিং: কন্টেন্ট রাইটাররা বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট লিখেন, যেমন ব্লগ পোস্ট, আর্টিকেল, ইমেল, ইত্যাদি।
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং: সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটাররা বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ব্যবসার প্রচার করেন।
- ভাষা অনুবাদ: ভাষা অনুবাদকরা বিভিন্ন ভাষার মধ্যে অনুবাদ করেন।
- ভিডিও এডিটিং: ভিডিও এডিটাররা বিভিন্ন ধরনের ভিডিও এডিট করেন, যেমন বিজ্ঞাপন, টিউটোরিয়াল, ইত্যাদি।
- ফটোগ্রাফি: ফটোগ্রাফাররা বিভিন্ন ধরনের ছবি তোলেন।
- বই লেখা: লেখকরা বিভিন্ন ধরনের বই লেখেন।
- পরামর্শ: ফ্রিল্যান্সাররা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা বা ব্যক্তিকে পরামর্শ দিতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে যারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান এবং তাদের নিজের সময় এবং পরিবেশে কাজ করতে চান। যদি আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে আগ্রহী হন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা বিকাশ করতে হবে। আপনি বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং কাজ খুঁজে পেতে পারেন।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনের সুবিধা-অসুবিধা অনুযায়ী কিছু পদ্ধতি নিয়ে নিচে আলোচনা করছিঃ
ব্লগিংঃ
অনলাইন জগতে আরেকটি স্মার্ট প্লাটফর্ম হচ্ছে ব্লগিং। আপনি যে আমার আর্টিকেলটি পড়ছেন। এতে আমি আপনাকে উদ্ধুদ্ধ করছি আমার এই ছোট্ট আর্টিকেল এর মাধ্যমে। এতে আপনি অনেকে কিছু জানতে পারছেন। এতে আমারও একটা বেনেফিট থেকে যাচ্ছে। আপনি আপনাকে জানিয়ে নিজের একটা ভালোলাগার জায়গা তৈরী হয়েছে, তেমনি আমার একটা বাড়তি আয়েরও সুযোগ হয়েছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং
ডিজিটাল মার্কেটিং থেকে আয় করার অনেকগুলি উপায় রয়েছে। এখানে কয়েকটি জনপ্রিয় উপায় রয়েছে:
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং: আপনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি যেমন ফেসবুক, টুইটার, এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে আপনার পণ্য বা পরিষেবাগুলির বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। আপনি সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার ব্র্যান্ডের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য কন্টেন্ট শেয়ার করতে পারেন, এবং আপনার গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
- সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান (SEO): আপনি আপনার ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফলের প্রথম পৃষ্ঠায় স্থানান্তর করে আপনার ওয়েবসাইট থেকে ট্রাফিক বাড়ানোর জন্য SEO ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনাকে আরও বেশি বিক্রি এবং গ্রাহক পেতে সাহায্য করবে।
- ইমেল মার্কেটিং: আপনি আপনার ইমেল তালিকা ব্যবহার করে আপনার গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এবং তাদের আপনার পণ্য বা পরিষেবাগুলি সম্পর্কে অবহিত করতে পারেন। আপনি ইমেল মার্কেটিং ব্যবহার করে আপনার গ্রাহকদের কাছে নতুন পণ্য বা পরিষেবাগুলি চালু করতে পারেন, এবং তাদের বিক্রি বাড়াতে পারেন।
- অনলাইন বিজ্ঞাপন: আপনি বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন গুগল অ্যাডস, ফেসবুক অ্যাডস, এবং ইয়াহু অ্যাডস ব্যবহার করে আপনার পণ্য বা পরিষেবাগুলির বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। আপনি অনলাইন বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে আপনার লক্ষ্য দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পারেন এবং আপনার বিক্রি বাড়াতে পারেন।
আউটসোর্সিং
আপনি ওয়েবসাইট তৈরী কিংবা মার্কেটিং এর ঝামেলায় যদি যেতে না চান, অথচ কম্পিউটারের কোন কাজে দক্ষ। সেটা ফটোশপ ব্যবহার করে হোক অথবা গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, প্রোগ্রামিং থেকে ডাটা এন্ট্রি, ভিডিও এডিটিং কিংবা এনিমেশন যে কোন কিছুই হতে পারে। তাহলে আপনার জন্য ফ্রিল্যান্সিং উপযুক্ত। কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলি প্রতিস্ঠান রয়েছে মধ্যস্থতা করার জন্য । সেখানে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করবেন (কোন খরচ নেই), তাদের কাজের তালিকা দেখে এপ্লাই করবেন, কাজ পাওয়ার পর কাজ করে জমা দিবেন। আপনার একাউন্টে সেই কাজের পারিশ্রমিক জমা হবে। ঘন্টাপ্রতি নির্দিষ্ট কাজ অনুযায়ী অথবা এককালীন চুক্তি অনুযায়ী ফ্রিলান্সিং কাজে পেমেন্ট দেয়া হয়। কাজের জটিলতা অনুযায়ী আয় কয়েক ডলার থেকে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্তও হতে পারে এই চুক্তি। মধ্যস্থতাকারী থাকে বলে টাকা হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। www.freelancer.com , www.odesk.com, fiverr.com ইত্যাদি এধরনের কাজে অন্যতম প্রতিস্ঠান।
এফিলিটেড মার্কেটিংঃ
এফিলিটেড মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সীমা হচ্ছে আকাশ। আপনি যত চেষ্টা করবেন তত বেশি আয় করবেন। আপনার কাজ হচ্ছে ইন্টারনেটে যারা কিছু বিক্রি করে (পন্য বা সেবা) তাদের হয়ে প্রচার করা।
পড়ালেখার পাশাপাশি ইন্টারনেটে ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা উপার্জন করা সম্ভব। এখানে কিছু টিপস দেওয়া হল:
- আপনার দক্ষতা খুঁজুন: আপনি কোন কাজগুলিতে ভাল? আপনি কোন কাজগুলিতে আগ্রহী? আপনার দক্ষতা এবং আগ্রহের উপর ভিত্তি করে আপনি ফ্রিল্যান্সিং কাজ খুঁজে পেতে পারেন।
- একটি অনলাইন প্রোফাইল তৈরি করুন: আপনি যে কাজগুলিতে ফ্রিল্যান্সিং করতে চান সেগুলির জন্য একটি অনলাইন প্রোফাইল তৈরি করুন। আপনার প্রোফাইলে আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং কাজের নমুনাগুলি অন্তর্ভুক্ত করুন।
- ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহার করুন: আপনি বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিং কাজ খুঁজে পেতে পারেন। এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে আপনি আপনার প্রোফাইল তৈরি করতে পারেন এবং কাজের জন্য বিড করতে পারেন।
- আপনার সময় এবং পরিবেশ বেছে নিন: আপনি ফ্রিল্যান্সিং কাজ যেকোনো সময় এবং যেকোনো পরিবেশে করতে পারেন। আপনি আপনার পড়ালেখার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে পারেন।
- আপনার মূল্য নির্ধারণ করুন: আপনি যে কাজগুলি করবেন সেগুলির জন্য আপনার মূল্য নির্ধারণ করুন। আপনার মূল্য নির্ধারণের সময় আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং কাজের মান বিবেচনা করুন।
- আপনার গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করুন: আপনি যে গ্রাহকদের সাথে কাজ করবেন তাদের সাথে সঠিকভাবে যোগাযোগ করুন। তাদের সময়মত কাজটি শেষ করুন এবং তাদের সন্তুষ্ট করুন।
- আপনার দক্ষতা বিকাশ করুন: আপনি যত বেশি কাজ করবেন ততই আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। আপনি বিভিন্ন অনলাইন কোর্স এবং টিউটোরিয়ালগুলির মাধ্যমে আপনার দক্ষতা বিকাশ করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে যারা পড়ালেখার পাশাপাশি টাকা উপার্জন করতে চান। যদি আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে আগ্রহী হন, তাহলে উপরের টিপসগুলি অনুসরণ করুন।
আরো কাজের হাজারো সেক্টর আছে। যেগুলো আপনাকে একটা দ্বিধায় ফেলে দিতে পারবে। এমন অবস্থায়, আপনি প্রায়োরিটি দিবেন৷ আপনার যেটার প্রতি মন বেশি যায়। যেকোনো একটা বেছে নিয়ে কাজ শুরু করে দেন৷ ব্যাস! লেগে থাকুন, সফলতা না পেলে চেস্টা করে যান। সফলতা আসবেই।