Education Article

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বাস্তবতা | কিছু উপদেশ ও পরামর্শ

BDNiyog Telegram AD

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখেনা এমন ছেলে মেয়ে খুঁজে পাওয়া যাবেনা।ছোট বেলা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কল্পনায় নিমজ্জিত ছেলে মেয়েরা জিবনের নানা বাক পেরিয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের দোড়গোড়ায় এসে পৌছে তখন সবার সুযোগ ঘটেনা সেই দরজা অতিক্রম করার। অল্প কিছু ভাগ্যবান সেই সুযোগ নিয়ে এই স্বপ্নের জগতে পা রাখে।

মনে পড়ে স্কুল কলেজের সেই দিনগুলোর কথা? বাবা মায়ের কড়া শাসন, শিক্ষকদের চোখ রাঙ্গানি, সন্ধ্যা হলেই পড়তে বসার জন্য বকুনি খাওয়া, বোর্ড পরীক্ষার চাপ, কখনই বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যাওয়ার অনুমতি না পাওয়ার মাঝে আমাদের কতবার মনে হত কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠিনা! হয়ত পড়ার টেবিলে বসে আমরা সেই রঙ্গিন জীবনের এক আধটু স্বপ্ন ও দেখে ফেলতাম। আর দেখবই না বা কেন! আমাদের বড় ভাইয়া আপুরা এমনকি আমাদের বাবা-মা ও আমাদের কতবার বলতেন যা ইচ্ছা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে করো, তখন কিছু বলবনা। ভাইয়া আপুরা বলতেন আরে যাহ্‌ ভার্সিটিতে কোনও পড়া আছে নাকি, খুব মজার জীবন, ক্লাসও ঠিকমত হয়না, খালি ঘুরবি আর ঘুরবি, একদম চিল লাইফ।

বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশাল জায়গা। বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন মানুষ পাড়ি জমাবে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে, সবার মতামত এবং চিন্তাধারা একরকম না-ই হতে পারে। অনেকের জন্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে খাপ খাওয়ানো হয়ে পড়ে কঠিন। তাই তোমরা যারা প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করতে যাচ্ছো, তাদের জন্যে থাকছে কিছু উপদেশ।

বহুদিনের মোহ ভাঙতে দেরি হয়না।হলে সিট না পেয়ে গণ রূমে মশা আর ছার পোকার কামড় খেয়ে আর হলে না থাকা শিক্ষার্থীরা ভার্সিটির বাস গুলোতে বাদর ঝোলা হয়ে প্রতিদিন ক্লাস করে টিকে থাকে। কিন্তু তারপর ও একটা অনেক বড় মানসিক তৃপ্তি নিয়ে দিন কাটায় এই ছেলে মেয়ে গুলো-দেশের সব থেকে সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে।
ভার্সিটিতে প্রথম বর্ষে আমরা প্রায় সকলেই এমন কিছু সমস্যার মুখোমুখি হই। আমাদের স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে আমরা এক বিস্তর ফারাক খুঁজে পাই। আবার হঠাৎ করে আমাদের স্কুল কলেজের ছোট গণ্ডি ছেড়ে এক মুক্ত পৃথিবীতে পা রেখেও আমরা অনেকে এক অদ্ভুত অস্তিত্বহীনতায় ভুগি। আমাদের মনে হয় এই জায়গাটা ঠিক আমাদের জন্য না। আজ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্যে এরকমই কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরব-

পড়ালেখার সাথে খাপ খাওয়াতে সমস্যা হওয়াঃ

স্কুল কলেজে আমাদের প্রত্যেকরই একটা আলাদা সিলেবাস ছিল। আমরা পরীক্ষার আগে সবসময় জানতাম কি আসতে পারে আর কি পারেনা। সেই অনুযায়ী দেখা যেত পরীক্ষার আগেই হয়ত আমাদের পড়া শেষ হয়ে যেত। 
ক্লাসে যা পড়ানো হত তাও আমাদের বোধগম্য হত। কিন্তু ভার্সিটিতে উঠে দেখা গেল সবকিছুই কেমন জানি অগোছালো। কোনও নির্দিষ্ট বই নেই,সিলেবাস ও নেই। এজন্য আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়ত খেই হারিয়ে ফেলে। কি পড়বে, কোথা থেকে পড়বে, কিভাবে পড়বে কিছু বুঝতে না বুঝতেই হয়ত মিডটার্ম চলে আসে। আর ফলাফল রেজাল্ট খারাপ। কারণ অনেকের মধ্যে এই ধারনাও কাজ করে ভার্সিটিতে উঠে আবার পড়া কি, অনেকে ইচ্ছা করেই হয়ত ক্লাস ফাঁকি দেয়। 
 
আমাদের কখনই ভুলে গেলে চলবে না অন্য সবকিছুর পাশাপাশি আমাদের পরীক্ষার ফলাফলটাও অনেক বেশি জরুরি। তাই আমাদের সিরিয়াস হতে হবে শুরু থেকেই। এজন্য প্রথমেই বই কিংবা কীভাবে পড়ালেখা শুরু করব সেটা নিয়ে ডিপার্টমেন্ট এর কাছের কোনও বড় ভাইয়া বা আপুর কাছে আমরা পরামর্শ চেয়ে নিতে পারি। আর নিয়মিত ক্লাস করার আসলেই কোনও বিকল্প নেই। ক্লাসে মনযোগী হলে অর্ধেক পড়াশোনা সেখানেই হয়ে যায়। প্রতিদিনের পড়া জমিয়ে না রেখে একটু একটু করে পড়ে ফেললেও আমরা দেখব পরীক্ষার আগে সবকিছু আর তেমন অগোছালো মনে  হচ্ছেনা।

বন্ধু নির্বাচনঃ

মানুষের জীবনে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বন্ধু নির্বাচন। কারণ একজন সঠিক বন্ধুই পারে তোমাদের সঠিক পথে নিয়ে জেতে। আবার একজন খারাপ বন্ধুই তোমার জীবন মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস করে দিতে পারে। এ জন্য তোমাদের সবসময়ই উচিত বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকা। যাদের সাথে তোমাদের মন মানসিকতা, পছন্দ, স্বপ্ন মিলে যায় কিংবা যাদের সাথে থেকে তোমরা কিছু শিখতে পার তাদের সাথেই তোমাদের বন্ধুত্ব করা উচিৎ। 

বিভিন্ন সেবামূলক কাজঃ

 
ভার্সিটিতে এতগুলো ক্লাব থাকে যে তোমরা প্রায়ই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগো আসলে কোন ক্লাবে যোগ দেয়া দরকার। প্রথমেই বলে রাখি ক্লাবিং এমন একটা জায়গা যেখানে তুমি পড়ালেখার বাইরে এমন কিছু করবে যেটা তোমাকে আনন্দ দিবে এবং তোমার একঘেয়ে জীবন থেকে একটু শান্তি দিবে। তাই এমন কোনও ক্লাবেই যোগ দেয়া উচিৎ যেখানে তুমি আসলেই আনন্দ পাও এবং তোমার আগ্রহ আছে। 
অনেকেই ভাবে অনেকগুলো ক্লাব করব নাকি একটা দুইটা ক্লাবেই সব মনোযোগ দিব? এটা সম্পূর্ণ তোমার নিজের উপর। কিন্তু সবগুলো ক্লাবে যোগ দিয়ে নিজেকে অনেক বেশি ব্যস্ত করে ফেললে তুমি আসলে পড়ালেখার বাইরে যে শান্তিটা চেয়েছিলে সেটা আর পাবেনা। তাই আমার মনে হয় দুই তিনটা ক্লাবই যথেষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের সাথে জড়িত থাকা খুব ভালো একটি ব্যাপার এবং এরকম কাজ ও থাকে প্রচুর। সবশেষে বলা যায় ক্লাবিং এবং পড়ালেখার বাইরে কাজগুলো আমাদের মন মানসিকতা যেমন উন্নত করে তেমনি আমাদের নেতৃত্ব ও অভিযোজন ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে।

পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে না পারাঃ

কখনই নিজেকে কারো চেয়ে ছোট মনে করবেনা। মানুষ বড় হয় তার মেধায়,মননে তার ব্যবহারে। তুমি নিজেকে যদি নিজের চোখে বড় মনে করতে না পারো, নিজেকে যদি সম্মান দিতে না পারো তাহলে অন্য কেউ তোমাকে সম্মান দিবেনা। তারপর ও যদি তোমার মনে হয় তুমি কিছু নিয়ে হতাশায় আছ কিংবা খাপ খাওয়াতে পারছেনা তাহলে ডিপার্টমেন্ট এর কোনও বিশ্বাসযোগ্য কাছের সিনিয়রের কাছে কিংবা শিক্ষকের কাছে তোমার ব্যাপারগুলোকে খুলে বলতে পারো। এছাড়াও প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়েই সাইকোলজিক্যাল সমস্যার জন্য স্টুডেন্টস কাউন্সিল রয়েছে।
 
সবশেষে বলা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সময়টুকু তোমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। এই সময়টুকু তুমি যেভাবে কাজে লাগাবে সেভাবেই তার ফল পাবে। প্রথম দিকে একটু সমস্যা হলেও আস্তে আস্তে দেখবে সব কিছুর সাথেই তুমি খাপ খাওয়াতে পেরেছ। তাই খুব তাড়াতাড়ি হতাশ না হয়ে আরেকটু সময় দাও। দেখবে সময়ের সাথে সাথে সবই ঠিক হয়ে গিয়েছে। আর স্কুল কলেজের ছেলে মেয়ে ভেদাভেদ ভুলে বন্ধুত্বের নির্মল সরলতাটাকে উপভোগ কর। আর যত পারো স্মৃতি তৈরি কর কারণ একসময় এই স্মৃতিই তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে।

বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডাঃ

 
ক্লাস ছুটির পর বাসায় গিয়ে পড়তে বসা/ টিউশনিতে না গিয়ে কিছুটা সময় বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিবে। তাস খেলা শিখবে। বুড়ো বয়সে গিয়ে এটাই সবচেয়ে মিস করবে!

বিশ্ববিদ‍্যালয়ের শিক্ষকঃ

 
বিশ্ববিদ‍্যালয়ের শিক্ষকরা নির্দেশক। তাদের কাছ থেকে নোট/ স্লাইড পাওয়ার আশা করে বসে থাকা উচিত না। এটা কোচিং সেন্টার না। এখানে তুমি কতটুকু পড়বে সেটা সিলেবাসে থাকে না। তুমি চাইলে নিজে নিজে পড়ে তোমার শিক্ষকের থেকেও ডিপ নলেজ পেতে পারো। তাই, নিজের জানার পরিধি কেবল ক্লাসের লেকচারে বেঁধে রেখো না। এমনকি কেবল নিজের সাবজেক্টে আটকে রেখো না। সব সায়েন্সের ব্রেক থ্রোর কথাই পড়বে। দিন শেষে যাতে একজন জ্ঞানী মানুষ হতে পারো।

অনুষ্ঠান উদযাপন করাঃ

 
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অন‍্যতম আনন্দের মুহূর্তগুলো হচ্ছে ফাল্গুন, বৈশাখ, বর্ষবরণের অনুষ্ঠানগুলো। তাই, বাসায় বসে পহেলা বৈশাখের ছুটিতে সারাদিন না ঘুমিয়ে থেকে বরং বন্ধুদের সাথে নিজের ক‍্যাম্পাসে কিছুক্ষণ খোশ-গল্প করতে পারলে মন্দ হবে না।

ঘুরে দাঁড়ানো শেখাঃ

 
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হচ্ছে জীবনের কাছে যখন হেরে যাবা তখন কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে সেটা শেখা। ব‍্যর্থতা অবশ্যই থাকবে। ফেল পরীক্ষায় না করলেও ব‍্যক্তিগত জীবনে তুমি অবশ্যই করবে। সেটা থেকে বের হয়ে আসার শিক্ষা অর্জন করতে পারলেই গর্ব করে নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করো।

সিনিয়রদের সাথে ভালো সম্পর্কঃ

সিনিয়রদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখলে অনেক সুবিধা (এমনি চাকরি-বাকরি) পাওয়া যায়। টিপস হলো, কোন সিনিয়রকে রাস্তায় একা পেলে ট্রিট চেয়ে বসবা। তবে, তোমার সাথে যদি আরো 10-12 জন থাকে তাইলে কোন লাভ নেই। সর্বোচ্চ 4-5 জন খাওয়ানো যায়।
 
সবশেষে বলা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সময়টুকু তোমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। এই সময়টুকু তুমি যেভাবে কাজে লাগাবে সেভাবেই তার ফল পাবে। প্রথম দিকে একটু সমস্যা হলেও আস্তে আস্তে দেখবে সব কিছুর সাথেই তুমি খাপ খাওয়াতে পেরেছ। তাই খুব তাড়াতাড়ি হতাশ না হয়ে আরেকটু সময় দাও। দেখবে সময়ের সাথে সাথে সবই ঠিক হয়ে গিয়েছে। আর স্কুল কলেজের ছেলে মেয়ে ভেদাভেদ ভুলে বন্ধুত্বের নির্মল সরলতাটাকে উপভোগ কর। আর যত পারো স্মৃতি তৈরি কর কারণ একসময় এই স্মৃতিই তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে।
BDNiyog Facebook AD
সকল পিডিএফ/ফাইল বিডিনিয়োগ বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করে থাকে। আমাদের প্রকাশিত কোনো ফাইলের প্রতি অভিযোগ/পরামর্শ থাকলে আমাদেরকে জানাতে পারেন। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিবো। আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন
Back to top button